বয়স্ক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
বয়স্ক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক সকল নাগরিককে সাক্ষর করে
তোলা। বিশাল নিরক্ষর জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বর্তমানে পনের বছরের
বেশি বয়সীদের সাক্ষরতার হার শতকরা ৪৯, অর্থাৎ পনের বছরের বেশি বয়সীদের শতকরা ৫১ ভাগ এখনও
নিরক্ষর। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার অপ্রতুলতা ও অনমনীয়তা এবং অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও দারিদ্র্যের
কারণে দেশে বিরাজমান নিরক্ষরতা ব্যাপক। নানা কারণে অনেক ছেলেমেয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় না বা ভর্তি
হয়েও পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারে না। নিরক্ষরতা সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ও শিক্ষাবিষয়কে ভিত্তি করে বয়স্ক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে কার্যকর গণশিক্ষার বিস্তার তাই জরুরি।
বয়স্ক শিক্ষা
বয়স্ক শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষকে সাক্ষর, লেখা-পড়া ও হিসাব-নিকাশে ন্যূনতমভাবে দক্ষ, মানবিক গুণাবলির
চেতনায় উদ্দীপ্ত, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতন এবং পেশাগত দক্ষতায় উন্নত করে তোলা। প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তি
১০০ শতাংশে উন্নীত এবং প্রাপ্ত বয়স্ক সকলকে সাক্ষর করে না তোলা পর্যন্ত বয়স্ক শিক্ষার এই ব্যবস্থা
অব্যাহত রাখা হবে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার পরিপূরক ব্যবস্থা। প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তি ১০০ শতাংশে
উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত যে সকল শিশু-কিশোর বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না এবং যারা ঝরে পড়ে যায় এই
ব্যবস্থায় তারা মৌলিক শিক্ষা লাভ করবে এবং কিছু ব্যবহারিক শিক্ষাও পাবে যা তারা প্রয়োজনে বাস্তব
জীবনে কাজে লাগাতে পারে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপনকারী যোগ্যতাসম্পন্ন শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষায়
উপযুক্ত শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারবে।
কৌশল
বয়স্কশিক্ষা
১. বয়স্ক শিক্ষার আওতায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে সাক্ষরতা শিক্ষা, মানবিক গুণাবলীর বিকাশ, সচেতনতা অর্জন
ও পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন।
২. দেশের সকল নিরক্ষর নারী-পুরুষের জন্য এই শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। তবে নিরক্ষরদের মধ্যে
যাদের বয়স পনের থেকে পঁয়তাল্লিশ বছর এক্ষেত্রে তারা অগ্রাধিকার পাবে।
৩. বয়স্ক শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বয়স্ক সাক্ষরতা কোর্স ব্যতিত
অন্যান্য কোর্সের সময়সীমা, বিষয়বস্তু, পঠন-পাঠনের পদ্ধতি, শিক্ষকের যোগ্যতা ও শিক্ষণ-প্রক্রিয়া,
স্থানীয় ও প্রবাসী জনমানুষের চাহিদা, সম্পদের প্রাপ্যতা ও পেশাগোষ্ঠীর প্রকৃ তি অনুসারে নির্ধারিত
হবে। জাতীয় গণশিক্ষার শিক্ষাক্রম-বিষয়ক কমিটি প্রয়োজনে শিক্ষার অন্যান্য ধারার যেমন- বৃত্তিমূলক
ও কারিগরি, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার কল্যাণ, কৃ ষি, বন ও পরিবেশ, মৎস্য ও পশুপালন ইত্যাদির সঙ্গে
সমন্বয় রেখে এবং বিদেশে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের বিষয়টি বিবেচনা করে উপযুক্ত বিষয়াদির শিক্ষাক্রম
প্রণয়ন করা হবে।
৪. অর্জিত শিক্ষা ও দক্ষতাকে অটুট রাখার জন্য অব্যাহত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। গ্রামে পাঠঅনুশীলন-চক্র ও গ্রামশিক্ষা-মিলনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।
৫. সমন্বিত সাক্ষরতা অভিযানে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজ বিভিন্ন পদ্ধতি,
উপকরণ, প্রক্রিয়া ও অভীষ্ট জনগোষ্ঠীর সমন্বয় ঘটিয়ে যথাসম্ভব কম সময়ে দেশ থেকে নিরক্ষতা দূর
করার চেষ্টা করা হবে। বিভিন্ন ধরনের বাস্তব উদ্যোগ উৎসাহিত করা হবে এবং মূল্যায়ন সাপেক্ষে যে
উদ্যোগ বিশেষভাবে কার্যকর প্রতীয়মান হবে সেটিকে জোরদার করার লক্ষ্যে সহায়তা দেওয়া হবে।
এই লক্ষ্যে শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমন¦য়ে একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হবে।
৬. স্থানীয় শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ, বিশেষ করে ছুটির সময় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স¤পৃক্ত করে
সংক্ষিপ্ত ও কার্যকর শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে বয়স্ক শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করা হবে ।
এক্ষেত্রে দেশে বিভিন্ন মহল কর্তৃক পরিচালিত/উদ্ভাবিত বয়স্ক শিক্ষাদান পদ্ধতি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত
বাস্তবায়নযোগ্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
৭. সাক্ষরতা কর্মসূচি পরিচালনায় বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিও ব্যবহার করা হবে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা
৮. উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় ভর্তি হওয়ার বয়স আট বছর থেকে চৌদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত বিস্তৃ ত হবে।
৯. প্রাথমিক শিক্ষার জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার উপকরণ প্রণীত হবে।
উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার উপকরণে জাতীয় চাহিদার প্রতিফলন থাকবে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত
করা যায় এমন উপকরণ দ্বারাই উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালিত হবে। গণশিক্ষার শিক্ষাক্রম বিষয়ক
একটি টেক্নিক্যাল কমিটি বিভিন্ন উপকরণ পর্যালোচনা করে মানসম্মত উপকরণাদির অনুমোদন দেবে।
১০. বেসরকারি সে¦চ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রাথমিক শিক্ষার জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে উপানুষ্ঠানিক
প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের জন্য উৎসাহিত করা হবে। দেশের অনগ্রসর এলাকা এবং অতিবঞ্চিত
শিশুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই শিক্ষাক্রমের আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে।
১১. উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পাঠদানে
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের দক্ষ করা হবে।
গণশিক্ষার ক্ষেত্রে কর্মোদ্যোগের সমন্বয়
১২. গণশিক্ষার ক্ষেত্রে সকল কর্মোদ্যোগের সমন্বয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৩. গণশিক্ষা প্রসারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং জাতীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা সমনি¦ত করা হবে।
গণশিক্ষা সংক্রান্ত আইন
১৪. গণশিক্ষা প্রসারের জন্য যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা পূরণ করার জন্য প্রয়োজনে যথাযথ
আইনগত কাঠামো প্রবর্তন করা হবে।
জাতীয় জাগরন ও স্বেচ্ছা সেবক
১৫. সাক্ষরতার লক্ষ্য অর্জনের জন্য সামগ্রীকভাবে জাতীয় জাগরন সৃষ্টি করা হবে। সকল শিক্ষিত মানুষকে
এ কাজে কিছু না কিছু অবদান রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৬. সাক্ষরতা আন্দোলন সফল করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলা হবে।
১৭. কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাক্ষরতা আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা হবে।